চুকাই(Hibiscus sabdariffa)






চুকাই (Hibiscus sabdariffa) একপ্রকার উপগুল্ম _ (subshrub) জাতীয় উদ্ভিদের ফল।ফলটি টক স্বাদযুক্ত; রঙ গাঢ় লাল। এর ইংরেজি নাম রোসেলা বা সরেল (Rosella, Sorrel)। পৃথিবীর অনেক দেশেই এই গাছের বানিজ্যিক চাষ করা হয়। দক্ষিণ এশিয়ার দেশ বাংলাদেশেও এই ফল পাওয়া যায়। বাংলাদেশের সর্বত্রই ফলটি জন্মে, তবে বানিজ্যিক চাষ হয় না। ক্রান্তীয় আফ্রিকা চুকাই গাছের আদি নিবাস বলে ধারণা করা হয়।
এটি অপ্রকৃত ফল। বৃতি এর ভক্ষ্য অংশ, যা খুবই পাতলা এবং পরিমাণে অল্প; গর্ভাশয় বড় এবং ছোট ছোট হুলযুক্ত। ভক্ষ্য অংশটি গর্ভাশয়কে ঘিরে থাকে। পরিপক্ক গর্ভাশয়ে অনেকগুলো বীজ থাকে। এটি বিদারী ফল, অর্থাৎ পাকলে এটি ফেটে যায় এবং বীজ ছড়িয়ে যায়।                                                          নাম:
বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন নামে ফলটি পরিচিত। যেমন: রাজশাহীতে চুকাই, ধামরাই এবং মানিকগঞ্জে চুকুল, সিলেটে হইলফা, কুমিল্লায় মেডশ বা মেষ্টা ইত্যাদি। এছাড়া ভারতের আসামে টেঙ্গামোরা , কেরালায় লালচাটনি, ইরানে চায়ে-তরশ, আরব দেশগুলোতে কারকাদি, ক্যারিবিয় ও ল্যাটিন আমেরিকায় সরেল, ইন্দোনেশিয়ায় রোসেলা, আফ্রিকার অনেকগুলো দেশে বিসাপ নামে পরিচিত।
ব্যবহার:
বাংলাদেশে এটি একটি অপ্রচলিত ফল। টক স্বাদের কারণে জ্যাম, জেলি বা আচার তৈরিতে ব্যবহৃত হয় এটি। এছাড়া এদেশে টক বা খাট্টা রান্না করেও খাওয়া হয়। এর মধ্যে 'পেকটিন' আছে বলে শুধুমাত্র চিনি ও চুকাই দিয়ে সহজেই জ্যাম তৈরি করা যায়, আলাদাভাবে পেকটিন মেশাতে হয় না। অস্ট্রেলিয়া, বার্মা এবং ত্রিনিদাদে এই ফলটি জ্যাম তৈরিতে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। বাংলাদেশের অনেক জায়গায় এই জ্যাম লালভর্তা নামে পরিচিত। ইংরেজিতে যাকে সরেল জেলি নামে ডাকা হয়।
চুকাই অনেক দেশে সস্তা সবজি হিসেবে ব্যাপক ব্যবহৃত হয়। সম্ভবতঃ এটি মায়ানমারের সবচে জনপ্রিয় সবজি।চুকাই পাতা রসুন, কাঁচামরিচ ও চিংড়ি মাছ বা অন্য মাছ সহযোগে ভাজি করে অথবা তরকারি রান্না করে খাওয়া হয়। চুকাই পাতা ও চিংড়ি শুটকি দিয়ে টক বা খাট্টা রান্না করেও খাওয়া হয় এবং এটি মায়ানমারে বেশ জনপ্রিয়।
ইতালি, আফ্রিকা ও থাইল্যান্ডে চুকাই পাতা দিয়ে ভেষজ চা বানিয়ে খাওয়া হয়। ত্রিনিদাদে বিয়ারের সাথে এই চা মিশিয়ে খাওয়ার রেওয়াজ আছে।
চুকাই বীজে স্নেহ-দ্রবনীয় (lipid soluble) এন্টি অক্সিডেন্ট আছে, বিশেষতঃ গামা-টোকোফেরল।
চুকাই গাছ রক্তচাপ কমানোর ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করা যায় বলে ধারনা করা হয়। এই গাছের কান্ড থেকে ভাল মানের আঁশ পাওয়া যায়; তাই অনেক দেশে পাটের বিকল্প হিসেবে চুকাই গাছ চাষ করা হয়।এক সময় চুকাই গাছ কবিরাজী ওষুধ হিসেবে মূত্রবর্ধক, মৃদু কোষ্ঠ-নরমকারী, হৃদরোগ, ক্যান্সার এবং স্নায়ুরোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হতো।
তবে রক্তচাপ কমানোর ক্ষেত্রে চুকাই গাছের ক্ষমতা সম্পর্কে যথেষ্ট বৈজ্ঞানিক প্রমান নেই। রক্তের চর্বির মাত্রা নিয়ন্ত্রনেও এর ভূমিকা প্রমানিত নয়।এ ব্যাপারে কিছু গবেষণা হয়েছে, তবে সেগুলোর ফলাফল সম্পর্কে মতভেদ আছে।
H. sabdariffa

মহুয়া (Madhuca longifolia)





হুয়া (Madhuca longifolia var. latifolia)- এটি মধ্যম থেকে বৃহৎ আকারের একটি বৃক্ষ। এটি ২০ মিটার পর্যন্ত উচু হতে পারে। ফুলগুলি হয় মাংসল,হালকা ধূসর রং এর এবং গাছে যখন সম্পূর্ণ ফুল ফোটে তখন ফুল থেকে আকর্ষনীয় মিষ্টি সুগন্ধ বের হয়। এর ফল হয় ডিম্বকৃতি। জুন থেকে জুলাই মাসের মধ্য এর পরিপক্ব হয়।
ল্যাটিফোলিয়া প্রজাতির মহুয়া বাংলাদেশ সহ ভারতীয় উপমহাদেশের সর্বত্র দেখতে পাওয়া যায়। বাংলাদেশে আরেকটি প্রজাতি হলো Madhuca indica । এই গাছ বহু ধরনের মাটিতে জন্মে তবে বেলে মাটিতে ভালো জন্মে পলিমাটিতেও এই গাছ বেশ ভালো হয়। এই গাছ খরা প্রতিরোধক। বাংলাদেশে এই গাছ বেশিরভাগ দিনাজপুর ও মধুপুর অঞ্চলে দেখতে পাওয়া যায়। আবাদি বৃক্ষ হিসাবে মহুয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ গাছ। এই গাছের বৃদ্ধিতে আলোর প্রয়োজনীয়তা খুব বেশী ছায়াতে এর বৃদ্ধি প্রয় বন্ধ হয়ে যায়। মহুয়া গাছ খুব ধীরে বড় হয়।
মহুয়া ফুলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ শর্করা,খনিজ দ্রব্য, ভিটামিন ও ক্যালসিয়াম। মদ ও সিরকা তৈরির গুরুত্বপূর্ণ উৎস হিসাবে আখের পরই মহুয়া ফুল । পশুখাদ্য হিসাবে এটি ব্যবহার করা যায়। মহুয়ার ফলে ফ্যাটি অয়েল থাকে বলে সাবান প্রস্তুতের কাজে ব্যবহার করা হয়। মহুয়া তৈলের প্রলেপ ত্বকের রোগ নিরাময়, বাত, মাথাব্যাথা, জোলাপ ও অর্শ রোগের ওষধ হিসাবে ব্যবহার করা হয়।
M. longifolia
Madhuca longifolia
(J.Konig) J.F.Macbr.

সাদা ভেরেন্ডা/জামাল গোটা (Jatropha curcas)





সাদা ভেরেন্ডা এক প্রকারের ওষধি গাছ। এর অন্যান্য স্থানীয় নামঃ বাগভেরেন্ডা ( বাগ= জঙ্গল), Physic Nut, Jatropha, Barbados nut , জামাল গোটা। বৈজ্ঞানিক নামঃ Jatropha curcas
এর বীজ কোষ্ঠ পরিস্কারক। মাত্রারিক্ত উদারাময় সৃজক।
J. curcas
Jatropha curcas
Linnaeus 1753.