গাঁজা(Marijuana)






গাঁজা(ইংরেজিঃ Marijuana)অন্যান্য স্থানীয় নামের মধ্যে আছে গঞ্জিকা,গাঞ্জা, সিদ্ধি, Somango প্রভৃতি অনেক নাম বিদ্যমান। ইহার বৈজ্ঞানিক নামে Cannabis sativa।দেশে দেশে
ভিন্ন ভিন্ন নামে বিভিন্ন দেশে এর বিস্তার। গাঁজা গাছের শীর্ষ পাতা এবং ডাল যা এই উপমহাদেশে গাঁজা নামে পরিচিত একই জিনিস পশ্চিমা দেশ গুলোতে মারিজুয়ানা বা মারিহুয়ানা নামে পরিচিত। গাছের পাতা বা ডালের আঠালো কষ দিয়ে তৈরী এ অঞ্চলের চরস নামের জিনিসটিই পশ্চিমা দেশের হাশিশ।ভাং, সিদ্ধি, পাট্টি, সব্জি, গ্রাস, মাজুন নানা নামে ডাকা হয় এই বিষাক্ত বস্তুটিকে।
কেন নিষিদ্ধ ও কতটা ক্ষতিকর গাঁজা?
এই মাদকটি গ্রহনে দৃষ্টিভ্রম, বাচালতা, মাংশপেশীর অনিয়ন্ত্রিত ও অপ্রয়োজনীয় সংকোচন, দিকভ্রান্ত হওয়া, মাথা ঘুরা, ক্ষুধা লাগা, গভীর ঘুমে অচেতন হয়ে যাওয়া,সময়জ্ঞান হারানো থেকে শুরু করে প্রলাপ বকা, বিকার আসা এমনকি মানুষকে হত্যাকরার ইচ্ছাও জাগ্রত হতে পারে। মাত্রা বেশী হয়ে গেলে অনেক সময় হাত পা এর নড়াচড়ার নিয়ন্ত্রন হারিয়ে ফেলা, হাতে পায়ে ঝি ঝি ধরা এবং অবশ হয়ে যাওয়া, কথা জড়িয়ে যাওয়া, মানসিক বিকারগ্রস্ত হয়ে যাওয়া থেকে শ্বাস কষ্ট হয়ে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।নিয়মিত এবং বেশী মাত্রায় গাঁজা জাতীয় দ্রব্য সেবনে গাঁজা সাইকোসিস (Ganja-psychosis) নামে একধরনের লক্ষন হয়। এতে চোখে রক্তজমে চোখ লাল হয়ে যায়, ক্ষুধামন্দা, নির্জিবতা, শরীরের মাংস-পেশী শুকিয়ে যাওয়া, অত্যাধিক দুর্বলতা, হাত-পা অনবরত কাপতে থাকা, পুরুষত্বহীনতা থেকে শুরু করে পুরোপুরি মানসিক রোগী হয়ে যাওয়ার সুযোগ থাকে।রানিং এমোক (Running amok) নামক আরেক ধরনের মানসিক বিপর্যয় ও গাঁজা সেবিদের পরিণতি হয়ে আসতে পারে। অবিরত গাঁজা সেবনের কারনে অনেক সময় এদের দৃষ্টিভ্রম (Hallucination), নির্যাতিত-বঞ্চিত হবার কল্পনা থেকে এরা হিংসাত্মক, আগ্রাসি সন্ত্রাসীর ভূমিকায় অবতীর্ন হতে পারে। রানিং এমক হলে লোকটি চোখের সামনে যাকে পায় তাকে তার কল্পিত শত্রু মনে করে অস্ত্র নিয়ে হত্যা করতে পারে এবং এই মানসিক অবস্থা কেটে যাবার আগ পর্যন্ত যাকে সামনে পায় ক্রমান্বয়ে তাকেই হত্যা করার চেষ্টা চালিয়ে যেতে থাকে। এই আবেশ কেটে গেলে একসময় সে আত্মহত্যা করতে যেতে পারে অথবা আত্মসমর্পনও করতে পারে।
ভেষজ গুণ
শরীরের বিষ-ব্যথা সারায় গাঁজা। এ কথার বর্ণনা রয়েছে ভারতবর্ষের প্রাচীন ও মধ্যযুগীয় চিকিৎসাশাস্ত্রে। তবে এ কথাও সুবিদিত যে, গাঁজা, ভাং ও মারিজুয়ানা গ্রহণ মানুষের স্মরণশক্তি হ্রাস করে এবং দীর্ঘ মেয়াদে মনোবৈকল্য ঘটায়। যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞানীরা এখন গাঁজা, ভাং ও মারিজুয়ানার ওপর গবেষণা করে জেনেছেন, এ সব মাদকদ্রব্য থেকে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীন ব্যথানাশক ওষুধ প্রস্তুত করা সম্ভব, যা মানুষের কোনো ক্ষতি করবে না। গবেষণাটি করেছে ফ্রান্সের বায়োমেডিকেল ইনস্টিটিউট। এর নেতৃত্ব দিয়েছে আইএনএসইআরএম। ফ্রান্সের গবেষকরা জানান, 'তারা ইঁদুরের মস্তিষ্কের যে অংশের কোষের নিউরনে গাঁজা বা মারিজুয়ানার মাদক ক্রিয়া করে তা ওষুধ প্রয়োগ করে নিষ্ক্রিয় করেন প্রথম। এর পর ওই ইঁদুরের শরীরে এসব মাদক প্রবেশ করিয়ে দেখা গেছে, তাতে ইঁদুরটি বেহুশ হয় না। বরং ওটির প্রাণচাঞ্চল্য ঠিকই থাকে। এ অভিজ্ঞতা থেকে বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, ব্যথানাশক হিসেবে গাঁজা বা মারিজুয়ানার ভালো গুণ মানুষের বিভিন্ন রোগের ওষুধ এবং অস্ত্রোপচারের জন্য চেতনানাশক হিসেবে ব্যবহার করা যাবে। শিগগিরই গাঁজা ও মারিজুয়ানার নির্যাস থেকে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীন এ ওষুধ প্রস্তুত হবে। আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়া ও আলাবামা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা এক গবেষণায় দেখেছেন, ভাং ও গঞ্জিকা সেবনে ফুসফুসের ক্ষতি তামাক পাতায় প্রস্তুত সিগারেট পানের চেয়ে কম।
C. sativa
Cannabis sativa
Linnaeus
C. sativa L. subsp. sativa
C. sativa
 L. subsp. indica

অপরাজিত(Clitoria ternatea)




অপরাজিতা (বৈজ্ঞানিক নাম: Clitoria ternatea) (সংস্কৃত: श्वेतां, विष्णूक्रांता, शंखपुष्पी)হচ্ছে ফ্যাবাসিয়াই (Fabaceae ) প্রজাতির একটি ফুল। গাঢ় নীল রঙের ফুল, কিন্তু নিচের দিকটা (এবং ভেতরটা) সাদা- কখনো বা একটু হলদে আভাস দেখা যায়।
উপপরিবার:
গোত্র:
C. ternatea
Clitoria ternatea
L.

গোল মরিচ (Piper nigrum)





গোল মরিচ (Piper nigrum) Piperaceae গোত্রের একটি লতাজাতীয় উদ্ভিদ, যার ফলকে শুকিয়ে মসলা হিসাবে ব্যবহার করা হয়। গোল মরিচ ফলটি গোলাকার, ৫ মিলিমিটার ব্যাসের, এবং পাকা অবস্থায় গাঢ় লাল বর্ণের হয়ে থাকে। এর মধ্যে ১টি মাত্র বিচি থাকে।
গোল মরিচ গাছের আদি উৎস দক্ষিণ ভারত। পৃথিবীর উষ্ণ ও নিরক্ষীয় এলাকায় এটির চাষ হয়ে থাকে।
গোল মরিচের গুঁড়া পশ্চিমা (ইউরোপীয়) খাদ্যে মসলা হিসাবে ব্যবহার করা হয় প্রাচীন কাল থেকে। তবে ভারত বর্ষের মসলাধিক্য রান্নায় এটির ব্যবহার প্রচুর। এছাড়া ঔষধী গুণাগুণের জন্যেও এটি সমাদৃত। গোল মরিচে পাইপারিন (piperine) নামের রাসায়নিক উপাদান রয়েছে, যা থেকে এর ঝাঁঝালো স্বাদটি এসেছে।

গোল মরিচের ইংরেজি নাম Black pepper। এর Pepper শব্দটি এসেছে সংস্কৃত ভাষার "পিপালী" শব্দ থেকে, যার অর্থ দীর্ঘ মরিচ। এখান থেকে উদ্ভুত হয়েছে লাতিন ভাষার piper যা মরিচ ও গোল মরিচ দুটোকেই বোঝানোর জন্য রোমানরা ব্যবহার করতো।
(unranked):
(unranked):
P. nigrum
Piper nigrum
L.[১]

রসুন(Garlic)






রসুন হল পিঁয়াজ জাতীয় একটি ঝাঁঝালো সবজি যা রান্নার মশলা ও ভেষজ ওষুধ হিসাবে ব্যাবহৃত হয়।
রসুন গাছ একটি সপুষ্পক একবীজপত্রী লিলি শ্রেণীর বহুবর্ষজীবী গুল্ম।
বৈজ্ঞানিক নাম অ্যালিয়াম স্যাটিভাম (Allium sativum)।
রসুন গাছের বিটপের নিম্নাংশ পরিবর্তিত হয়ে বাল্ব জাতীয় সঞ্চয়ী অঙ্গ তৈরি করে যা মশলা হিসাবে রান্নায় ব্যাবহৃত হয়। পিয়াঁজের সঙ্গে প্রধান পার্থক্য হল সাদা রঙ এবং অনেক কোয়ার গুচ্ছ।ভেষজ                                                                                                    ব্যাবহার
রসুন বিশ্বে বাণিজ্যিক ভেষজ হিসাবে সফলতম। ২০০৪ সালে ২৭ মিলিয়ন ডলারেরও বেশী ভেষজ রসুনজাত ওষুধ বিক্রয় হয়। রসুন নিম্নলিখিত উপকার করে বলে মনে করা হয়ঃ
রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা কম করে (কিছু প্রমাণ আছে)।
রক্তচাপ কম করে (কিছু প্রমাণ আছে)।
করনারি (হার্ট) ধমনী রোগে উপকারী (নির্ভরযোগ্য প্রমাণের অভাব আছে)[৪]।                    ক্রিয়া প্রণালী
দুর্গন্ধযুক্ত ভেষজ গুণবাহী যৌগ অ্যালিসিন
এর প্রধান সক্রিয় উপাদান অ্যালিসিন নামক সালফারযুক্ত জৈব যৌগ। অ্যালিসিন রসুনের কুখ্যাত গন্ধ ও বিখ্যাত ভেষজ গুণ দুইয়ের-ই প্রধাণ কারণ। অক্ষত রসুনে অ্যালিসিন থাকে না, থাকে অ্যালিইন - একটি অ্যামিনো অ্যাসিড যা প্রোটিন তৈরীতে অংশ গ্রহণ করে না (যা নিজে আরেক অ্যামিনো অ্যাসিড সিস্টিন থেকে তৈরি হয়) । রসুনকে কাটলে বা ক্ষত করলে অ্যালিনেজ নামে একটি উৎসেচক অ্যালিইন থেকে অ্যালিসিন তৈরি করে। অ্যালিসিন খুবই স্বল্পস্থায়ী। রান্না করলে বা অ্যাসিডের প্রভাবে অ্যালিনেজও নিষ্ক্রিয় হয়ে যায়। তাই ভেষজ গুণের জন্য কাঁচা রসুন বেশী উপকারী। অ্যালিসিন দেহে কোলেস্টেরল তৈরির উৎসেচক এইচএমজিকোএ রিডাক্টেজ কে বাধা দেয় বলে জানা গেছে। অনেকে বিশ্বাস করেন অণুচক্রিকার উপরে কাজ করে এটি রক্ততঞ্চনে বাধা দেওয়ার ক্ষমতা রাখে, যা হৃদোরোগে উপকারী। কিন্তু এর নির্ভরযোগ্য প্রমাণ এখনও পাওয়া যায়নি
উপপরিবার:
Allioideae
গোত্র:
Allieae
A. sativum
Allium sativum
L.

ছাতিম(Alstonia scholaris)




ছাতিম গাছ “অ্যাপোসাইনেসি” বর্গের অন্তর্ভূত একটি উদ্ভিদ যার বৈজ্ঞানিক নাম এলস্টোনিয়া স্কলারিস (Alstonia scholaris, Echites scholaris L. Mant., Pala scholaris L. Roberty) । এর আদি নিবাস ভারতীয় উপমহাদেশ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া। ক্রান্তীয় অঞ্চলের এই গাছটি বাংলাদেশসহ ভারত উপমহাদেশের সর্বত্র জন্মে। আর্দ্র, কর্দমাক্ত, জলসিক্ত স্থানে ছাতিম বেশী জন্মে। ছাতিম মূলাবর্তে সাতটি পাতা এক সঙ্গে থাকে বলে সংস্কৃতে এবং হিন্দিতে একে 'সপ্তপর্ণ' বা 'সপ্তপর্ণা' নামে ডাকা হয়।                                                                                                         বর্ণনা
ছাতিম গাছ
ছাতিম গাছ ৪০ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। বহুশাখা বিশিষ্ট গাছটির ছাল গন্ধহীন, অসমতল ও ধুসর। ছাতিম পাতার উপরের দিক চকচকে আর তলার দিক ধুসর এর শাখা পত্রমূলাবর্ত বিশিষ্ট। ১০ থেকে ১৫ সে. মি. লম্বা পাতা একই মূলাবর্তে ৪ থেকে ৭ টা পর্যন্ত থাকে। শাখার শীর্ষে সবুজ মেশানো সাদা রংয়ে থোকায় থোকায় ক্ষুদ্রাকৃতি ফুলফোটে। ৩০ থেকে ৬০ সে.মি. লম্বা সরু ফল এক বৃন্তে সাধারণতঃ দুটো ক’রে ঝুলে থাকে। ছাতিমের বীজ লম্বাটে ডিম্বাকার, কিনারায় আঁশ থাকে আর শেষ প্রান্তে এক গোছা চুল থাকে। ছাতিম গাছের অভ্যন্তরে দুধের মতন সাদা এবং অত্যন্ত তেতো কষ প্রচুর পরিমানে থাকে।                                                                                                বিস্তার
ছাতিম গাছের আদি নিবাস এইসব অঞ্চল:
চীন: গুয়াংজি, ইউনান
ভারতীয় উপমহাদেশ: বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, শ্রীলংকা, পাকিস্তান
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া: কম্বোডিয়া, মায়ানমার, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, পাপুয়া নিউ গিনি, ফিলিপাইন
অস্ট্রেলিয়া: কুইন্সল্যান্ড
এছাড়া অন্যান্য অনেক ক্রান্তীয় ও উপক্রান্তীয় অঞ্চলেও গাছটি পরবর্তীতে বিস্তার লাভ করেছে। এটি পশ্চিম বঙ্গের 'প্রাদেশিক বৃক্ষ'রূপে ঘোষিত হয়েছে।ঔষধী গুণ
ছাতিমের কষ অনেকেই ওষুধরূপে ঘা বা ক্ষতে লাগিয়ে থাকেন ছাতিম গাছের বাকল বা ছাল শুকিয়ে নিয়ে ওষুধের কাজে ব্যবহার করা হয়। দীর্ঘস্থায়ী অতিসার এবং আমাশয়ে এটি অত্যন্ত উপকরী। জ্বর ধীরে ধীরে নামায় বলে ম্যালেরিয়াতেও উপকারী। অন্যান্য ওষুধে জ্বর নামার সময় খুব ঘাম এবং পরে যে দুর্বলতা হয়, ছাতিমে তা হয় না। চর্মরোগেও ছাতিম ফলপ্রদ। স্নায়ুর শক্তিসূত্রে অসাড়তা আনে বলে রক্তের চাপ কমাতে ছাতিম উপকারী। কিছু পরীক্ষায় দেখা গেছে যে অ্যাণ্টিবায়োটিক কোন গুণ বা শারীরিক ক্রিয়ার সাহায্য করার কোন শক্তি ছাতিমের নেই।ছাতিমের কাঠ দিয়ে খুব সাধারণ মানের আসবাব, প্যাকিং কেস, চায়ের পেটি, পেনসিল এবং দেশলাইযের কাঠি তৈরী হয়। পুরাকালে ছাতিমের কাঠ দিয়ে শিশুদের লেখার জন্য তক্তা বানান হত। মনে করা হয় সেই কারণেই জ্ঞৈানিক নামে “এলস্টোনিআ”-এর পর “স্কলারিস” কথাটি যোগ করা হয়েছে।
(unranked):
(unranked):
(unranked):
গোত্র:
উপগোত্র:
A. scholaris
Alstonia scholaris
L. R. Br.

নেরিকা(New Rice for Africa)




নেরিকা (ধান) বাংলাদেশে নবপ্রবর্তিত এক নতুন প্রজাতির ধান যা বন্যাপরবর্তী সময়ে নাবী আমন হিসেবে চাষ করে ভালো ফলন পাওয়া যায়। এটি একটি উচ্চ ফলনশীল ধান (উফশী)। দেশের বন্যাকবলিত এলাকায় পানি সরে যাওয়ার পর যেসব এলাকায় আমন ধান রোপণের সময় পার হয়ে যায় অথবা প্রচলিত আমন ধানের চারা থাকে না, সেখানে নেরিকা ধানের চাষ করা যায়। তুলনামূলকভাবে অল্প সময়ে ধান ফলে এবং পাকে। স্বল্পজীবনকাল, প্রতিকূলসহিষ্ণু এবং বছরের যে কোন সময় চাষ করার উপযোগিতার কারণে নেরিকা ধান চাষে দ্রুত জনপ্রিয়তা অর্জ্জন করেছে। হাওর ও দক্ষিণাঞ্চলসহ দুর্গত এলাকায় চাষের জন্য নেরিকা ধান জাতটি খুবই উপযোগী।এটি আফ্রিকা থেকে আনীত ধান এবং স্থানীয়ভাবে বীজ উৎপাদন করে এর আবাদ বৃদ্ধি করা হচ্ছে।                    আবিষ্কার, নামাকরণ
"নিউ রাইস ফর আফ্রিকা", সংৰিপ্ত নাম "নেরিকা", থেকেই নেরিকা ধানের নাম। এশিয়া মহাদেশের "অরাইজা স্যাটাইভা" প্রজাতির সঙ্গে আফ্রিকানর প্রজাতি ‘’অরাইজা গস্ন্যাবারিমা’’ ইন্টারস্পেসিফিক শঙ্করায়নের মাধ্যমে ১৯৯০ খ্রিস্টাব্দে পরীক্ষাগারে নেরিকা জাতের ধান উদ্ভাবিত হয়। প্রজননের ইতিহাসে অরাইজা স্যাটাইভা ও অরাইজা গস্ন্যাবারিমা প্রজাতির মধ্যে ইন্টারস্পেসিফিক শঙ্করায়ন করে উচ্চ ফলনশীল জাতের নেরিকা ধান উদ্ভাবন পৃথিবীর ইতিহাসে সর্ব প্রথম সাফল্য বলে দাবি করেছেন গবেষকরা। নেরিকা প্রজাতির ধান উদ্ভাবনের জন্য ড. মন্টি জোন্স প্যাট্রিক এবং হাইব্রিড ধান উদ্ভাবনের জন্য প্রফেসর ইয়ান লং পিংকে বিশ্ব খাদ্য পুরস্কার-২০০৪ যৌথভাবে প্রদান করা হয়।
প্রচলন
এ দেশে আফ্রিকার ধান নেরিকা’র পরীক্ষামূলক চাষাবাদ শুরু হয় ২০০৯ খ্রিস্টাব্দের সেপ্টেম্বরে মাত্র ৬০ গ্রাম বীজ। এরপর থেকে ধীরে ধীরে এই ধানের আবাদের হার বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে। স্থানীয় ভাবে বীজ উৎপাদন করে এ ধানের চাষ বাড়ানো হচ্ছে। ২০১০ খ্রিস্টাব্দে এই ধানের ৪৫ মেট্রিক টন বীজ উৎপাদন হয়। ২০১১ খ্রিস্টাব্দের জানুয়ারিতে নেরিকা-১ ও ৪ জাতের দুই মেট্রিক টন এবং নেরিকা-১০ এক মেট্রিক টন ধান বীজ উগান্ডা থেকে আমদানি করা হয়। এর পরপরই বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশান (বিএডিসি) বিভিন্ন বীজ উৎপাদন খামার এবং চুক্তিবদ্ধ চাষী এলাকার মাধ্যমে ২০১০-১১ বোরো মৌসুমে প্রায় ১৮০ মেট্রিক টন বীজ উৎপাদন করে। ২০১১-১২ খ্রিস্টাব্দে বিভিন্ন খামার ও চুক্তিবদ্ধ চাষী জোনের মাধ্যমে আউশ মৌসুমে ৮৪ মেট্রিক টন নেরিকা ধানের বীজ উৎপাদন হয়। দুই বছরে প্রায় ৫০০ মেট্রিক টন বীজ উৎপাদন করেছে বিএডিসি। নেরিকা জাতের ধানের আবাদ ক্রমবর্ধমান।
গুণগত বৈশিষ্ট্য
নেরিকা ধান বর্ধনশীল পর্যায়ের। এর পাতা চওড়া, মসৃণ, কা- শক্ত। দ্রম্নত সময়ের মধ্যে গাছের বৃদ্ধি ঘটে। পুনঃউৎপাদনশীল পর্যায়ে নেরিকা ধান অরাইজা স্যাটাইভা’’র চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য পাওয়ায় নেরিকা উচ্চ ফলনশীল। আদর্শস্থানীয় ব্যবস্থাপনায় নেরিকা ধানের ফলন হেক্টরপ্রতি ছয় টন পর্যন্ত হয়ে থাকে। স্বাভাবিক পর্যায়ের ব্যবস্থাপনায় হেক্টরপ্রতি চার টন ও সাধারণ ব্যবস্থাপনায় হেক্টরপ্রতি দুই টন ধান উৎপাদন সম্ভব। ৯০-১০০ দিনের মধ্যে নেরিকা-১০ উৎপাদন হয়ে থাকে। ৯৫-১০০ দিনের মধ্যে নেরিকা-১ ও নেরিকা-৪ উৎপাদন হয়। আলোকসংবেদনশীল বিধায় আমাদের দেশে আউশ, আমন ও বোরো তিন মৌসুমেই চাষাবাদের উপযোগী। এক মৌসুমের ফসল কেটেই সেই বীজ দিয়ে পরবর্তী মৌসুমের ফসল আবাদ করা যায়। এক হাজার ধানের ওজন ২৬ থেকে ৩৬ গ্রাম। এর ফলন প্রচলিত জাতের তুলনায় এক থেকে দেড় টন বেশি।
বিশেষগুণাবলী
এই ধান প্রতিকূলতা সহিষ্ণু। এই ধান পোকাসহিষ্ণু। বেশি। লবণাক্ত মাটিতে এই ধানের চাষ সম্ভব।এই ধান খরাসহিষ্ণু। বৃষ্টিনির্ভর উঁচু জমিতে চাষাবাদের জন্য উপযুক্ত। এই ধান গাছের শেকড়, মাটির গভীরে এক মিটার পর্যন্ত প্রবেশ করতে পারে। ফলে গাছ খুব শক্ত, মজবুত হয় এবং মাটির গভীর থেকে খাদ্য উৎপাদন ও পানি সংগ্রহ করতে পারে। ধান ঝরে পড়ে না। ফলে কাটার সময় ফসলের কোন ক্ষতি হওয়ার আশংকা নেই। এই ধান পাকার পরও গাছ সবুজ ও শক্ত থাকে। ফলে ফসল বিনষ্ট হয় না। সুন্দর সোনালি রঙের কারণে অনেক দূর থেকেই নেরিকা ধান শনাক্ত করা যায়।
খরা প্রতিরোধী
এটি খরাসহিষ্ণু বিধায় ২১ দিন পর্যন্ত পানি না পেলেও ফসলের ক্ষতি হয় না।
প্রজাতি
নেরিকা ধানের রয়েছে কয়েক প্রজাতির জাত। এই ধানের জাত নেরিকা-১ থেকে ১৮ পর্যন্ত। বিভিন্ন প্রজাতির বিভিন্ন বেশিষ্ট্য রয়েছে। যেমন নেরিকা-১, নেরিকা-৪, নেরিকা-১০ ইত্যাদি। এর মধ্যে এক হাজার ধানের ওজন ২৬ থেকে ৩৬ গ্রামের ধান কাটার পর মাত্র তিন দিনের মধ্যে আবারও বীজ বোনা যায়। সরাসরি ধান ছিটিয়ে কিংবা বীজতলায় চারা তুলে এই ধান চাষ করা সম্ভব।
ফলন
নেরিকা-১ হেক্টরপ্রতি সাড়ে চার মেট্রিক টন, নেরিকা-৪ পাঁচ মেট্রিক টন এবং নেরিকা-১০ ছয় মেট্রিক টন উৎপাদন সম্ভব। ব্রিধান-২৮ ও ব্রিধান-২৯ পাকতে ১২৫-১৩০ দিন লাগলেও নেরিকা ধান মাত্র ৯০ দিনে পেকে যায়। এ জাতটির চালে পুষ্টিমানও বেশি। প্রোটিনের পরিমাণ প্রায় ১০ শতাংশ। এশিয়ার অন্য ধানের জাতে প্রোটিন প্রায় আট শতাংশ। মাধবপুর উপজেলার ইটাখোলা বীজ উত্পাদন খামারে নেরিকা-১০ জাতের ধানে হেক্টরপ্রতি ফলন হয়েছে ৫ দশমিক ৯৫ টন। তবে মরুপ্রবণ রাজশাহী এলাকায় এই ধান চাষ করে খুব কম ফলন পাওয়া গেছে।
খাদ্যগুণ
এই ধানের চালে রয়েছে নয় দশমিক ৫১ থেকে ১১ দশমিক ৮১ ভাগ উচ্চমাত্রার প্রোটিন। ভাত সুস্বাদু। ২৩ থেকে ২৭ দশমিক আট ভাগ পর্যন্ত এমাইজোল বেশি হওয়ায় ভাত হয় ঝরঝরে।
চাষের পদ্ধতি
নেরিকা ধান উঁচু জমিতে চাষ উপযোগী। জমিতে দাঁড়ানো পানি সহ্য করতে পারে না। সেচের প্রয়োজন সামান্য। ধানের বর্ধনশীল, কাইচ থোর ও ফুল বের হওয়ার সময় জমিতে জো-অবস্থায় রস থাকা আবশক। সুনিষ্কাশিত বেলে দোআশ ও এটেল দোআশ মাটি এ ধানের উপযোগী। পাহাড়ি জমিতে জুম চাষও করা যাবে।
জমি তৈরি
জমি শুকনো অবস্থায় চাষ ও মই দিয়ে উত্তম রূপে তৈরি করতে হবে। এর ওপর নির্ভর করে প্রয়োগকৃত সারের কার্যকরি ব্যবহার, মাটির রজ্রতা, বাতাল চলাচল, অঙ্কুরোদগম, চারা গজানো, মাটিতে গাছের প্রতিষ্ঠা ও বৃদ্ধি লাভ। জমির মাটি ঝুরঝুরে ও সমান হবে। জমে থাকা পানি নেরিকা ধানের জন্য ক্ষতিকর। সেচ খরচ কম।
বীজ শোধন
বীজ বপনের ২-৩ দিন পূর্বে শোধন করে নিলে বীজবাহিত ও মাটি বাহিত রোগ মুক্ত থাকে এবং সমভাবে বীজের অঙ্কুরোদগমন হয়।
বপন সময়
নেরিকা ধান আলোক অসংবেদনশীল হওয়ায় আউশ (মার্চ-এপ্রিল), আমন (জুলাই-আগষ্ট), বোরো (ডিসেম্বর-জানুয়ারি) তিন মৌসুমেই আবাদ উপযোগী। স্বল্প জীবনকাল হওয়ায় নাবী আউশ ও নাবী আমন হিসাবে আবাদ হয়। বীজে সুপ্ততা না থাকায় পূর্ববর্তী মৌসুমের বীজ দিয়ে পরবর্তী মৌসুমে ধান আবাদ করা সম্ভব।
বপন পদ্ধতি
ডিবলিং পদ্ধতি: প্রতি বপন স্থানে ৫-৭ টি বীজ বপন করে চারার বয়স ১৪-২১ দিন হলে ২-৩ টি চারা রেখে বাঁকি চারা তুলে ফেলতে হবে। বপনের দূরত্ব হবে ২০ সেমি। বীজের হার হেক্টর প্রতি ৫০-৬০ কেজি। এ ছাড়াও সরাসরি ধান বীজ বপন পদ্ধতি, ম্যানুয়ালী বীজ বপন পদ্ধতি, সীড-ড্রিল মারা বীজ বপন পদ্ধতি, প্রি-জার্মিনেটেড পদ্ধতি, আট লাইনে বীজ বপন পদ্ধতি, কাদাময় জমিতে বীজ বপন, বন্যা পরবর্তী জমিতে নাবী আমন, ছিটিয়ে বীজ বপন পদ্ধতি ব্যবহার করা যায়।
আগাছা দমন
জমি ভালভাবে চাষ ও মই দিয়ে তৈরি, আগাছামুক্ত বীজ বপন, অনুমোদিত হারে বীজ বপন, নিড়ানী বা আগাছা দমন যন্ত্র ব্যবহার, প্রয়োজনে ওষুধ প্রয়োগে আগাছা দমন করা যায়।
প্রি-জার্মিনেট
এতে ২-৩ দিনের মধ্যে চারা ভালভাবে গজায় ও গাছ প্রতিষ্ঠা লাভ করে। প্রি-জার্মিনেটের জন্য বীজ ২৪ ঘন্টা পরিষ্কার পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে। এরপর ৩ বার ধুয়ে ৪৮ ঘন্টা বীজ জাগ দিয়ে রাখতে হবে যেন বীজের মুখ ফেটে অঙ্কুরায়নের পূর্বাবস্থায় আসে।
সার ব্যবস্থাপনা
একর প্রতি ১১০ কেজি ইউরিয়া, ৫০ কেজি টিএসপি, ৫০ কেজি এনওপি, ৫ কেজি রোরনমনেট, ৫ কেজি দস্তা ও ৪০ কেজি জিপসাম সার নিয়ম মেনে প্রয়োগ করতে হবে।
সেচ ব্যবস্থাপনা
নেরিকা ধান দাঁড়ানো পানি সহ্য করতে পারে না। বৃষ্টিনির্ভর চাষাবাদে সারা মৌসুমে ৫ দিন ১৫-২০ মিমি বৃষ্টিপাত যথেষ্ট। কাঙ্খিত বৃষ্টিপাত না হলে বপনকালে, কাইচ থোর অবস্থায় ও ফুল ফোটার সময় গম আবাদের মতো হালকা সেচ দিতে হবে যাতে মাটিতে জো-অবস্থায় রস থাকে।
রোগ ও পোকামাড় দমন ব্যবস্থা
ব্লাষ্ট, পাতা পোড়া রোগ, খোল পোড়া, মাজরা পোকা, গলমাছি, গান্ধি পোকা, বাদামী গাছ ফড়িং ইত্যাদি পোকার আক্রমণ ও রোগ বালাই হতে পারে। প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিলে এ সমস্যা সমাধান সম্ভব।
ফসল কর্তন, মাড়াই, শুকানো ও সংরক্ষণ
নেরিকা ধানের ৮০ ভাগ দানা খড়ের রং ধারণ করলে ধান কর্তনের উপযুক্ত সময়। ধান কাটার সাথে সাথে মাড়াই করা যায়। এর পর শুকাতে হবে। খাদ্যশস্য হিসাবে ১৪% ও বীজ হিসাবে ১২% আদ্রতায় বীজ সংরক্ষণ করতে হবে।